বুধবার, ১২ জানুয়ারী, ২০২২

বিশ্বগ্রামের বেসিক ধারনা ও পরিচিতি

 

Global Village





বিশ্বগ্রাম কী ? বিশ্বগ্রামের ধারনা ?  বিশ্বগ্রামের  প্রতিষ্ঠানের উপাদানসমূহ ? বিশ্বগ্রাম ধারনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন ?  বিশ্বগ্রামের ধারনা সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানসমূহ ? বিশ্বগ্রামের গুরুত্বপূর্ন সুবিধাসমূহ ?


আজ আমরা বিশ্বগ্রাম সর্ম্পকে জানব । আমরা এখান থেকে বিশ্বগ্রাম এর যাবতীয় তথ্য জানতে পারব । 


বিশ্বগ্রাম :

 - বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি পরিবেশ যেখানে পৃথিবীর সকল মানুষ একটি একক সমাজে বসবাস করে এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে একে অপরকে সেবা প্রদান করে থাকে । 
 - বিশ্বগ্রাম এমন একটি শদ্ব যেখানে গোটা পৃথিবীকে একটি গ্রাম হিসেবে কল্পনা করা হয় । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কারনে আজ পুরো বিশ্ব একটি গ্রামে পরিনত হয়েছে । 

 - অক্রফোর্ড আমেরিকান ডিকশনারি অনুযায়ী  বিশ্বগ্রাম হচ্ছে  “ The world considered a single community linked by telecommunications . ” 

 - উইকিপিডিয়ার  একটি উদ্ধৃতি অনুযায়ী বিশ্বগ্রাম হচ্ছে  “ The global village is the sociological and cultural structure . " 

 - উপরের সকল সংজ্ঞা অনুযায়ী  - বিশ্বগ্রাম হচ্ছে এমন একটি সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা যার আনুষঙ্গিক সকল কিছুই ইন্টারনেট তথ্য ও  যোগাযোগ প্রযুক্তির বিদ্যমান । 

বিশ্বগ্রামের ধারনা: 

বিশ্বগ্রামের প্রথম ধারনা দেন “ মারর্শাল ম্যাকলুহান ”  । তিনিই সর্বপ্রথম  বিশ্বগ্রাম শদ্বটি ব্যবহার করেছিলেন । 
মারর্শাল ম্যালুহান  কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয় এর  ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ও বিখ্যাত দার্শনিক ছিলেন । তিনি “ দি মিডিয়াম ইজ দি মেসেজ ” ( the medium is the message ) এবং “ গ্লোবাল ভিলেজ বা  বিশ্বগ্রাম ” ( Global Village ) এর উদ্ভাবক  হিসেবে  পরিচিতি লাভ করেছেন । তিনি ইন্টারনেটকে বাণিজ্যকভাবে ব্যবহারের প্রায় ৩০ বছর পূর্বে এ সর্ম্পকে ধারনা দিয়েছিলেন । মারর্শাল ম্যাকলুহান  ১৯৬২ সালে তার প্রকাশিত গ্রন্থে  " The Gutenberg : The making of Typographic Man "  এবং ১৯৬৪ সালে তার প্রকাশিত গ্রন্থে " Understanding Media " এ বিশ্বগ্রাম সর্ম্পকে ধারনা দিয়েছিলেন ্ । " Understanding Media " বইতে তিনি বিশ্ব বা গ্লোবকে ইলেকট্রনিক টেকনোলোজি এর সাহায্য কীভাবে একটি গ্রাম সংকুচিত হয়েছে  এবং ক্ষনিকের মধ্যে তথ্য একস্থান থেকে অন্য স্থান কীভাবে একই সময়ে চলাচল করে তা বর্ণনা করেছিলেন । তাঁর সময়ে ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল । মারর্শাল ম্যাকলুহানের মতে  ,  ইলেকট্রনিক কমিউনিকেশন প্রযুক্তির ব্যাপক বিস্তারের ফলে সময় ও দূরত্ব  সংকুচিত  (shrink ) হয়ে পৃথিবী  একটি গ্রামে পরিনত হয়েছে । তিনি বিশ্ব বা গ্লোবকে ইলেকট্রনিক  ও কমিউনিকেশন প্রযুক্তির বিস্তৃতিকে “ ইলেকট্রনিক নার্ভাস সিস্টেম ( Electronic Nervous System ) ” নামে আখ্যায়িত করা হয় । তাঁর মতে পৃথিবী কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক নার্ভাস সিস্টেমের সাহায্য সংযুক্ত হয়ে বিশ্বগ্রামে রুপান্তরিত হয়েছে । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্রমবর্ধমান উন্নতির ফলে সময় ওদূরত্ব সংকুচিত হয়ে সমস্ত পৃথিবী ক্রমশই ছোট হয়ে একটি গ্রামের দিকে যাএা করেছে । একই গ্রামের  সকল মানুষ যেমন একে অপরের সাথে নিজেদের  সাথে যোগাযোগ করতে পারে । তথ্য ও যোগাযোগ  প্রযুক্তির অগ্রগতিতে আমরা  এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত এ খুব সহজে যোগাযোগ করতে পারি । বিশ্বগ্রামের ধারনা আমাদের পৃথিবী একটি গ্রামে পরিনত হয়েছে । 

বিশ্বগ্রামের প্রতিষ্ঠার উপাদানসমূহ :

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির কল্যানে গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম  এর ধারনা বাস্তবায়ন ও প্রতিষ্ঠা  সম্ভব হচ্ছে । বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য পাঁচটি উপাদান আবশ্যক । বিশ্বগ্রাম এর প্রতিষ্ঠার উপাদানের জন্য  পাচঁটি উপাদান উল্লেখ করা হলো : 

 ১. হার্ডওয়্যার  ( Hardware )
 ২ . সফটওয়্যার  ( Software
 ৩ . নেটওয়ার্ক সংযুক্ততা বা কানেকটিভিটি  ( Connectivity )
 ৪ . ডেটা  ( Data )   এবং 
 ৫ . মানুষের সক্ষমতা  ( Capacity )

  • হার্ডওয়্যার  : বিশ্বগ্রাম যে কোন ধরনের যোগাযোগ ও তথ্য আদান - প্রদানের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত হার্ডওয়্যার সামগ্রী । হার্ডওয়্যার এর মধ্যে রয়েছে কম্পিউটার এবং এর সাথে সংযুক্ত পেরিফেরাল যন্তপাতি ,  ল্যান্ড বা মোবাইল ফোন , স্মার্ট ফোন , অডিও - ভিডিও রেকর্ডার , স্যাটেলাইট , রেডিও , টেলিভিশন  এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নির্ভর বিভিন্ন ডিভাইস । 
  • সফটওয়্যার : বিশ্বগ্রাম প্রতিষ্ঠার জন্য হার্ডওয়্যার এর  পাশাপাশি সফটওয়্যার প্রয়োজন । সফটওয়্যার এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের  অপারেটিং সিস্টেম , ব্রাউজিং সফটওয়্যার , কমিউনিকেটিং সফটওয়্যার , প্রোগামিং ভাষা ইত্যাদি । সফটওয়্যার খুবই গুরুত্বপূর্ন ।
  • সংযুক্ততা বা কানেকটিভিটি : বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ড হলো নিরাপদভাবে রিসোর্স  শেয়ার করার নেটওয়ার্ক বা কানেকটিভিটি  যার মাধ্যমে বিভিন্ন উপাত্ত ও তথ্য আমরা একে অপরকে খুব সহজে ডেটা বা উপাত্ত পাঠাতে পারি । নিরাপদ তথ্য আদান - প্রদান হচ্ছে বিশ্বগ্রামের মূল ভিত্তি । নিরাপদ তথ্য প্রদানের জন্যই প্রয়োজন নিরাপদ নেটওয়ার্ক বা কানেকটিভিটি ।  বিশ্বগ্রামের মেরুদন্ড হচ্ছে কানেকটিভিটি । বিশ্বগ্রামে যুক্ত হওয়ার জন্য কানেকটিভিটি খুবই গুরুত্বপূর্ন  । বিশ্বের তথ্য  ভান্ডারের সাথে সার্বক্ষনিকভাবে বা প্রয়োজনে সংযুক্ত থেকে তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার জন্য কানেকটিভিটি গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে । ব্রড কাষ্টিং , টেলিকমিউনিকেশন এবং ইন্টারনেট কানেকটিভিটি এর মূল নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে ।
  • ডেটা : ডেটা হলো সাজানো নয় এমন কিছু বিশৃঙ্খল ফ্যাক্ট ( Raw Fact ) । ডেটাকে প্রসেসিং বা প্রক্রিয়াকরন এর মাধ্যমেই ব্যবহারযোগ্য ইনফরমেশন  বা তথ্যে পরিনত করা হয়  ্। বিশ্বগ্রামে বসবাস করতে প্রয়োজন বিভন্ন তথ্য যা ডেটা থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রসেসিং করে পাওয়া যায় । বিশ্বগ্রামে ডেটা ও তথ্যকে মানুষের প্রয়োজন এক অপরের সাথে বিনামূল্যে বা অর্থের বিনিময় ডেটা ও তথ্যকে শেয়ার করতে পারি । 
  • মানুষের সক্ষমতা : বিশ্বগ্রামের উপাদানগুলোর মধ্যে মানুষের সক্ষমতা অন্যতম । যেহুতু বিশ্বগ্রাম তথ্য প্রযুক্তি নির্ভর তাই তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ে মানুষের সচেতনতা , স্বাক্ষরতা ও সক্ষমতা ইত্যাদির উপর  প্রয়োগ নির্ভর করেছে । তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর অবকাঠামো ব্যবহার করার জ্ঞান না থাকলে এর সুফল পাওয়া সম্ভব না । বিশ্বগ্রামে যোগদানে হওয়ার জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন আবশ্যক ।

  বিশ্বগ্রাম ধারণার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন : বিশ্বগ্রাম  ধারনার পূর্ণাঙ্গ  বাস্তবায়ন করা সম্ভব ইন্টারনেট অফ থিংস ( Internet of Things - IOT )  এর মাধ্যমে ্ । বর্তমান সময়ে ‘ ইন্টারনেট অফ থিংস ’ বা ‘ আইওটি ’ নিয়ে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক নিয়ে আলোচনা করেছে । গুগলসহ বিভিন্ন সার্চ ইন্জ্ঞিনসমূহ  আইওটি সর্ম্পকিত বিষয় আগ্রহ ও সার্চ এর পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে  । ‘ ইন্টারনেট অফ থিংস ’ বা ‘ আইওটি ’ এর কল্যানে মারর্শাল ম্যাকলুহানের বিশ্বগ্রাম ধারনার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন সম্ভব হয়েছে । 
ইন্টারনেট অফ থিংস বা আইওটি হল এমন একটি নেটওয়ার্ক যাতে বাহ্যিক বিভিন্ন ডিভাইস , গাড়ি , বাড়ি ইত্যাদি সামগ্রী পরস্পর ডেটা সংগ্রহ ও বিনিময় করার জন্য ইলেকট্রনিক্র , সফটওয়্যার , সেস্নর ও নেটওয়ার্ক কানেকটিভিটি অনুবিদ্ধ থাকে । আইওটি একটি বিশাল নেটওয়ার্ক যা বিভিন্ন বস্তকে ডেটা আদান - প্রদানের জন্য  সংযুক্ত করে মানুষকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে  । এটা হল মূলত : নেটওয়ার্ক , প্রোগাম , সেস্নর আর মেশিনের সমন্বয় গঠিত একটি সিস্টেম দিয়ে ডিভাইসগুলো এক অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে এবং ডেটা বিনিময় করতে পারে । 
উদাহরন হিসেবে স্মার্ট ফ্রিজের কথা বলা যেতে পারে । আইওটি প্রযুক্তি বাস্তবায়ন সম্ভব হলে স্মার্ট ফ্রিজ হবে এমন একটি প্রযুক্তি যা নিজে থেকেই ভেতরের প্রয়োজনীয় খাদ্য আছে কী না তা শনাক্ত করতে সক্ষম হবে । এখানে ফ্রিজের ভেতরে একটি ক্যামেরা বা সেস্নর স্থাপন করা হবে যা ফ্রিজের ভেতরের অবস্থা পরিদর্শন করে ব্যবহারকারী বা মালিককে টেক্রট বা এসএমএম এর মাধ্যমে তথ্য দিতে পারবে । প্রয়োজনে ব্যবহারকারীর পক্ষে সুপার মার্কেটে  অর্ডার প্লেস করতে পারবে ।

বিশ্বগ্রাম ধারনার সংশ্লিষ্ট প্রধান উপাদানসমূহ :  বর্তমান বিশ্ব  তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এর কল্যানে গ্লোবাল ভিলেজ  বা বিশ্বগ্রাম এর দিকে ধাবিত হচ্ছে । গ্লোবাল ভিলেজ বা বিশ্বগ্রাম ধারনার সাথে অনেক  উপাদান ওতপ্রোতভাবে জড়িত । প্রধান প্রধান উপাদানগুলো হলো : 
যোগাযোগ ( Communication ) , কর্মসংস্থান ( Employment ) , শিক্ষা ( Education ) , স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা ( Health care and Treatment ) , গবেষণা ( Research ) , অফিস ( Office ) , বাসস্থান ( Residence ) , ব্যবসা - বানিজ্য ( Business) , সংবাদ ( News ) , বিনোদন ও সামাজিক যোগাযোগ ( Entertainment and social communication ) , সাংস্কৃতিক বিনিময় ( Cultural exchange ) ইত্যাদি । বিশ্বগ্রামে সংযুক্ত হওয়ার জন্য এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ন । 

বিশ্বগ্রামের গুরুত্বপূর্ন সুবিধাসমূহ নিম্মরূপ : 

 ১ . সারা পৃথিবী মানুষের হাতের মুঠোয় এসেছে । 
 ২ . মানুষের জীবন যাএার মান উন্নত ও সহজ হয়েছে । 
 ৩ . মানুষের কাজের দক্ষতা এবং গতি বৃদ্ধি পেয়েছে  । 
 ৪ . ব্যবসা - বাণিজ্য এর প্রসার ঘটেছে এবং লেনদেন সহজ ও দ্রুততর হয়েছে । 
 ৫ . অন - লাইন লাইব্রেরি , অন- লাইন ইউনিভার্সিটি , ভিডিও টিউটোরিয়াল বা বিভিন্ন প্রকার ই - বুক ব্যবহারের ফলে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়েছে । 
 ৬ . ঘরে বসেই খুব সহজে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে । 
 ৭ . ইন্টারনেট এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে ্। 
 ৮ . অনলাইনে  খবর পড়া   ও ব্লগে লেখালেখি করার মাধ্যমে মতামত প্রদান ও সচেতনতা বৃদ্ধি হয়েছে । 
 ৯ . সকল ধরনের ব্যবস্থাপনার খরচ কমে েএসেছে ্। ফলে ই - গর্ভানেস্ন বাস্তবায়ন করা সহজ হয়েছে । 
১০ . গবেষণার উপাত্ত ও তথ্য প্রাপ্তি সহজতর হয়েছে এবং বিভিন্ন গবেষনার ফলাফল জানা যাচ্ছে ।


বিশ্বগ্রাম মানবজীবনে আর্শীবাদ রুপে এসেছে ্ । বিশ্বগ্রাম এর কারনে আজ আমরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খুব সহজে যোগাযোগ করতে পারি । বিশ্বগ্রাম আমাদের সবাইকে একটি গ্রামে আবদ্ধ করে ফেলেছে ।

পোষ্টটি ভালো লাঘলে অবশ্যই শেয়ার করবেন ।

0টি মন্তব্য:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

এতে সদস্যতা মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন [Atom]

<< হোম